বাকৃবি প্রতিনিধি:
‘বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ভেটেরিনারি এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ (বিএসভিইআর)-এর আয়োজনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ৩১তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন কাল শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হবে।
দুই দিনব্যাপী ওই সম্মেলনে বাকৃবি ছাড়াও দেশের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ছয়টি প্রতিষ্ঠানসহ দেশি-বিদেশি মোট ৫০০-র অধিক গবেষক, প্রাণি চিকিৎসক ও শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবেন। সম্মেলনে ১২টি টেকনিক্যাল সেশনে গবেষণামূলক ৯০টি মৌখিক এবং ১৬২টি পোস্টার উপস্থাপন করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘প্রাণীর স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’।
বিএসভিইআরের ৩১তম বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে এসব কথা বলেন, বিএসভিইআরের কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সুকুমার সাহা। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের মেডিসিন কনফারেন্স রুমে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বিএসভিইআরের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম, ৩১তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন আয়োজক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ উদ্দিন ভূঞা এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোছা. মিনারা খাতুনসহ আয়োজক কমিটি ও কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে ড. সুকুমার সাহা আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাণিদের তাপজনিত চাপ বৃদ্ধিসহ মশা, মাছি ও টিকবাহিত (আঠালি) রোগের মতো বিভিন্ন রোগের বিস্তার ঘটছে। পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ছে। অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া কৃষি, পানিসম্পদ, বাস্তুতন্ত্র ও প্রাণি স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। তাই এই সম্মেলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো - খাদ্য নিরাপত্তা, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স ওয়ান হেলথ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি। এছাড়াও পরিবেশবিদ ও ভেটেরিনারিয়ানদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা গড়ে তোলা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং প্রাণী ও মানুষের সংক্রামক রোগ (জুনোটিক রোগ) সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পাশাপাশি প্রাণিজ উৎপাদন বৃদ্ধি ও মৃত্যুহার হ্রাস এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্যোক্তা তৈরির মনোভাব সৃষ্টি করাও সম্মেলনের অন্যতম উদ্দেশ্য।’
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। এছাড়া উপস্থিত থাকবেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান, ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান, ইন্টার এগ্রো বিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এ কে এম খশরুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ঘানায় নিযুক্ত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সিনিয়র অ্যানিমেল প্রোডাকশন অ্যান্ড হেলথ অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামছুদ্দিন।
এসময় বিএসভিইআরের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম বলেন, ‘বিএসভিইআর ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের ভেটেরিনারি পেশার শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের একটি নেতৃস্থানীয় সংগঠন। ভেটেরিনারি পেশার উৎকর্ষতা সাধনের লক্ষ্যে শিক্ষাবিদ, গবেষক ও ভেটেরিনারিয়ানদের সমন্বয়ে এই সোসাইটি কাজ করে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনে প্রাণিসম্পদ ও স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাবের বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়ে এবারের সম্মেলনের বিষয়বস্তু নির্ধারিত হয়েছে। সম্মেলনে গবেষকগণ তাদের উপস্থাপনার মাধ্যমে যেসব পরামর্শ ও তথ্য প্রদান করবেন, সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে আমরা একটি সুন্দর সমাধান পেতে পারবো। আমি আশা করি, এবারের বৈজ্ঞানিক সম্মেলন অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অধিক সাফল্যমণ্ডিত হবে।’
সম্মেলন আয়োজক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ উদ্দিন ভূঞা বলেন, ‘এবছর সম্মেলনে পূর্বের তুলনায় সর্বোচ্চ সংখ্যক গবেষণামূলক পোস্টার ও মৌখিক উপস্থাপনার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্য থেকে সেরা পোস্টার উপস্থাপনায় ছয়টি এবং সেরা মৌখিক উপস্থাপনায় ১২টি পুরষ্কার প্রদান করা হবে। এছাড়া ভেটেরিনারি গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য দেশের প্রথিতযশা ৯ জন প্রাক্তন শিক্ষককে সম্মাননা প্রদান করা হবে।’
সম্মেলন আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. মোছা. মিনারা খাতুন বলেন, ‘৩১তম বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে প্রথমবারের মতো দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান যেমন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা এসিডিআই/ভোকা ও ‘ফ্লেমিং ফান্ড কান্ট্রি গ্রান্ট টু বাংলাদেশ’ অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতা করছে। এছাড়াও ৩০টির অধিক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবার সম্মেলন আয়োজনে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা করেছে। সম্মেলনের পূর্বে ৩১ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো ‘বিএসভিইআর উদ্যোক্তা ইভেন্ট’ আয়োজন করতে যাচ্ছে। ওই উদ্যোক্তা ইভেন্টে ভেটেরিনারি অনুষদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন।’